শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ…?

ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ…?

স্বদেশ ডেস্ক: সংস্কার করার পরেও কাক্সিক্ষত পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো। কমছে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাও। কান্তজির মন্দির, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ এই চারটি ঐতিহাসিক স্থানে সংস্কারের জন্য ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু নিম্নমানের কাজ আর যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রকল্প হতে জনগণ সুফল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের সুপারিশ ও দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণে যথাযথ তদারকি করা হয়নি। ফলে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার দুই বছর পার হয়ে গেলেও পাহারপুর বৌদ্ধ বিহারে ফুড কোর্ট, কান্তজির মন্দিরের রেস্ট হাউজ, টয়লেট ব্লক, মার্কেট ব্লক, পার্কিং ব্লক, মহাস্থানগড়ের শপিং কমপ্লেক্স চালু হয়নি। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে কান্তজির মন্দির কমিটির সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। নওগাঁ জেলার পাহারপুর বৌদ্ধবিহারে নিম্নমানের কাঠ ব্যবহারে করে মন্দিরের ওপরে উঠার সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়েছে। এতে যেকোনো সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হয়েছে। তা ছাড়া দর্শনার্থীদের অবাধ বিচরণের ফলে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বগুড়ার মহাস্থানগড়ে কাঠের সেতু ও সিঁড়িতে নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এখানেও যেকোনো সময়ে বড়ো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ষাটগম্বুজ মসজিদে ফাটল দেখা দিয়েছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হান্নান মিয়া বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমি কিছুদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। নিম্নমানের কাজের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করেছে আইএমইডি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রভাব মূল্যায়ন সমীক্ষাটি করা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সম্প্রতি এর সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের চারটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থান কান্তজির মন্দির, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ সংস্থার ও সংরক্ষণ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করা হয়। সংস্কার করার ফলে প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর নান্দনিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এগুলো যথাযথভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না।
আইএমইডির জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, দর্শনীয় স্থানে বিদেশি পর্যটকদের আগমন কমছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী মহাস্থানগড় জাদুঘরে ২০১৩-২০১৮ পর্যন্ত বছরে গড়ে ৫১৭ জন বিদেশি পর্যটকের আগমন হয়েছে। এ সময়ে পাহাড়পুর জাদুঘরে এসেছে ৬৬৫ জন বিদেশি পর্যটক। বাগেরহাট জাদুঘরে গড়ে এসেছে ১ হাজার ৪০০ পর্যটক এবং ময়নামতি জাদুঘরে এসেছে গড়ে মাত্র ২৯৭ জন বিদেশি পর্যটক। অবশ্য দেশি পর্যটক আগমন বাড়লেও তারা স্থানগুলোর বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। আইএমইডির জরিপে প্রায় অর্ধেক দর্শনার্থী তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। ৮৯ শতাংশ পর্যটক জানিয়েছেন পরিবহন সংকটের কথা। আবাসন কালীন সংকটের কথা জানিয়েছেন ৭৩ শতাংশ পর্যটক। ২১ শতাংশ পর্যটক নিরাপত্তাহীনতার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সংস্কারের ফলে যে পরিমাণ দেশি পর্যটক আসবে বলে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল তার অর্ধেকও আসেনি। ৫৯ শতাংশ পর্যটকের মতে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর পর্যাপ্ত বর্ণনা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া নেই। ৬৩ শতাংশ পর্যটক মনে করেন ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না। ৬৯ শতাংশের মতে পরিচ্ছন্নতার মান নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877